ফ্লাট ক্রয়ে - সাবধান!!
                                                                               - মুহাম্মদ মুরাদ উদ্দিন


মাথাগোঁজার জন্য নিজের একটু ঠাঁই কে না চাই? স্বপ্নের সেই ঠাঁই পেতে গিয়ে এদেশে অনেকেই সর্বশান্ত হয়েছেন। এক ধরনের অসাধু চক্র মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সবকিছু হাতিয়ে নিচ্ছে। লোভনীয় ইমারত, ডিজাইন, কারুকার্য দেখে অনেকেই আবেগ আপ্লুত হয়ে ফ্লাট এর বুকিং দেয়। কিন্ত ফ্লাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনা না করায় অবশেষে সেই স্বপ্ন আর পূরণ হয় না। তাই এক্ষেত্রে খুবই সাবধান হওয়া জরুরী। ক্রেতাদের সচেতনতার জন্য নিম্মে কিছু বিষয় উল্লেখ করা হলঃ

ফ্লাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে ত্রেতাগণ যে সকল সমস্যায় পড়তে পারেনঃ

১.    অসাধু ডেভেলপারগণ ক্রেতার সাথে ফ্লাট বিক্রয় চুক্তি করে পরবর্তী কালে নানা অজুহাতে চুক্তিটি বাতিল করে থাকেন। অতপর একই ফ্লাট একাধিক ব্যক্তির নিকট বিক্রয় করে থাকেন। কিন্তু চুক্তির মারপ্যাচে ফেলে ক্রেতার টাকা ফেরৎ দেন না বা দিতে দেরী করেন।
২.    শর্ত সমুহ এমন থাকে যে ক্রেতারা তা বাস্তবায়নে একটু এদিক সেদিক করলেই কোন ধরণের নোটিশ না দিয়েই ফ্ল্যাটের বরাদ্দ বাতিল করে দেয়।  
৩.    সঠিক সময়ে ফ্ল্যাটের দখল বুঝিয়ে দেন না।
৪.    ফ্ল্যাটের দখল বুঝিয়ে দিলেও রেজিষ্ট্রেশন দিতে নানা টালবাহানা করা।
৫.    অসম্পূর্ণ ফ্ল্যাট ক্রেতাকে বুঝিয়ে দিয়ে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে থাকা।
৬.    শর্তানুযায়ী যথাযথ উপকরন না দিয়ে বরং নিম্ন মানের মালামাল ও উপকরণ ব্যবহার করায় বিবাদ তৈরী করা।
৭.    গুনগত মানের পন্য চাইলে অতিরিক্ত টাকা দাবি করা।
৮.    জমির মালিকানায় সমস্যা থাকতে পারে। অনেক সময় সরকারী সম্পত্তির উপর ফ্লাট নির্মাণ করে বিক্রয় করে থাকে।
৯.    খতিয়ান, নামজারি ইত্যাদি সমস্যা থাকতে পারে।

প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে সতর্কতার সহিত ফ্ল্যাট ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিনঃ

১.    ডেভেলপার আইনানুগ নিবন্ধিত কিনা যাচাই করে নিন।
২.    কোম্পানীর সুনাম-দুর্নাম ও যাবতীয় লিগ্যার ডুকমেন্টস সমুহ যাচাই করতে হবে।
৩.    জমি মালিকের সাথে ডেভেলপারের চুক্তিপত্র ও আমমোক্তারনামাটি শর্তাবলী ভালভাবে যাচাই করা।
৪.    জমির স্বত্বের কাগজপত্র যাচাই করা।
৫.    অনুমোদিত প্ল্যান, নক্সা, সুয়ারেজ, পানি, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল অনুমোদন, ফ্্যাটের সাইজের ভেতর-বাহির এর পরিমাণ ইত্যাদি যাচাই করা।
৬.    জমির মালিক কোন কোন ফ্ল্যাট পাবেন তা ভালভাবে দেখতে হবে।
৭.    পেইমেন্ট সিডিউল, দখল ও রেজিষ্ট্রেশন পদ্ধতি গুলো যাচাই করা।
৮.    ক্রেতার কোন অধিকার খর্ব হলে কি প্রতিকার পাওয়া যাবে তা চুক্তিতে সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করতে হবে।
৯.    নির্মিত ফ্ল্যাট সমুহ যত তলা করা হয়েছে, তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে করা হয়েছে কিনা নিশ্চিত করা।
১০.    চুক্তির শর্ত সমুহ ক্রেতার পক্ষে পালনযোগ্য কিনা তা ভালভাবে নিশ্চিত করতে হবে। ক্রেতার পেইমেন্ট ক্ষমতা ও পেইমেন্ট সিডিউল এর সমন্বয় ঘটানো আবশ্যক।
১১.    ভূমি মালিক বা ডেভেলপার ব্যাংক ঋণ নিয়ে থাকলে ত্রেতাকে উহার সুদসহ পরিশোধ করতে হবে। তাই এ ব্যাপারটি মাথায় রাখতে হবে।
১২.    রেজিষ্ট্রেশন নিতে কেমন খরচ হবে তা ভালভাবে যাচাই করা। নচেৎ বাজেট ফেল করে সমস্যায় পড়তে পারেন।

এসকল সমস্যা সমধানকল্পে প্রত্যেক ক্রেতার উচিত হাতে সময় নিয়ে প্রতিটি বিষয় ভালভাবে যাচাই করা। যারা ফ্লাট ক্রয় করেছেন তাদের সাথে আলোচনা করা দু-চার টি কোম্পানীর খোঁজ খবর নেয়া। প্রয়োজনে যে কোন পেশাদার ল’ ফার্ম বা কনসালটেন্সী ফাম এর সহযোগিতা নিন। মনে রাখবেন, ”অতি গতি-ই ক্ষতি” - র কারণ হয়ে থাকে। কাজে-ই, ফ্লাট ক্রয়ে সাবধান।


 

(নোটঃ জমির দলিল পত্র, বায়া দলিল, খতিয়ান, মিউটেশন/ পরচা,  ষ্ট্যাডি ও সঠিকতা যাচাই, যাবতীয় অনুমোদন, কোম্পানীর  আইনগত অবস্থান নিশ্চিত করা, আইনগত প্রতিকার, চুক্তিরপত্র যাচাই ও পরামর্শ এর জন্য ”মিরপুর ল’ এন্ড কনসালটেন্সী ফার্ম” সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করছে।)
 যোগাযোগঃ ০১৯৬৭-১১৩১২৮, ০১৭২৩-৯৪৬৯৬৯